ফুলেল ভালবাসা

 

 

ফুলেল ভালবাসা




ফুলেল ভালবাসা

 

 ভরদুপুরে যখন নিতাম তোমার পিছু,বাঁকা চাহনিতে বুঝিয়ে দিতে 

-এই বিপদ হতে পারে, এসোনা আমার পিছু।

 কোনদিন কোন কথা হয়নি মুখে বলা।

 আসলে চোখের চাহনিতে এতই কথা হতো মুখে, কিছু বলার প্রয়োজনই তখন ফুরালো।

একদিন সেই কাঁচাপাকা রাস্তার মোড়ে- জানিনা কোন সাহসের জোড়ে

 এক গাদা ফুল হাতে বোকা হয়ে দাঁড়িয়ে তোমার পাশে ।

 ভেতরটা কেমন দুরুদুরু কাঁপছে ,হাত-পাগুলো ঠান্ডা হয়ে আসছে।

 তবুও মন যেন তোমায় কি বলতে চায়।

আমি বুঝি না কিসের এত ভয়? বাঘ ভাল্লুক তো নয়!!

 কি জানি কি হয় তোমায় বলতে লাগে ভয়।

 ধমকের সুরে তুমি বললে-  আপনি এতো ভীতু কেন ?

 কি বলবেন বলেন, সময় নেই আমার।

 না মানে, তেমন কিছু না- এই তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?

 কি!!! এইজন্য আপনি এসেছেন?

 এই হাতে হাত হাতে কি আছে দেখি?

 এটা কেমন করে তুমি বললে-  রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের ফুলদেওয়ায়  কি আপনার কাজ?

 অবশেষে মুখটাকে মিষ্টি একটা ভেঙচি দিয়ে, হাত থেকে ফুল গুলো কেড়ে নিয়ে দৌড়ে চলে গেলে।

 কি অদ্ভূত এক প্রশান্তি এলো মনে।

 এরপর থেকেই আমি প্রচন্ড ফুল কে ভালবাসি।

 

এরপর আরো কত কি হয়ে গেল।

 আমাদের ঘর হল, সংসার হল, ফুটফুটে একটা বাচ্চাও হল।

 সব চাওয়াই  পূর্ণ হল শুধু কিছু আক্ষেপ থেকে গেল।

মনে আছে?

 তোমার মাথায় ফুল গুঁজে দিয়ে কতবার বলেছি তোমায় ভালোবাসি

 গোলাপ নিয়ে আমাদের ঝগড়াটার কথা কি মনে আছে ?

 আমি কত শখ করে তোমার জন্য সাদা আর কালো গোলাপ  আনলাম বিদেশ থেকে।

 তুমি কি বললে- এটা কি কোন ফুল হলো??!!

 যাতে কাটা আছে তা আবার ফুল হয় কি করে।

 তোমার পছন্দ গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা ,আরো কী যেন নাম মালতি সন্ধ্যা।

শোন-  আমি সব ফুল কিনে আনবো, আর তোমায় ফুলের মালা গলায় পরিয়ে প্রাণটা ভরে দেখবো।

 যতদিন তুমি আর আমি ছিলাম একসাথে, এই ফুলই সাক্ষী আমাদের কোন দুঃখই ছিল না চলার পথে।

 জীবনের শেষ দিনটিতে, তুমি তখন হাসপাতালের ব্যাডে।

 ফুলের তোড়া নিয়ে তোমায় বললাম- আমায় ক্ষমা করে দিও, পারিনি তোমার খেয়াল রাখতে।

 কান্নার মাঝেও মুচকি হেসে বললে আমি মরে গেলে কবরে আমার সাথে একটা গন্ধরাজ দিয়ে দিও।

 তাহলে বুঝবো তুমি আছো আমার পাশে।

 সেই থেকে আমি প্রচন্ড ফুল ভালোবাসি।

 এই শুনছো তোমাদের সবার বিরুদ্ধে আছে আমার অভিযোগ।

 দেখতে দেখতে কত বছর চলে গেল, আমাদের মেয়েটাকে তার মামারাই বিয়ে দিয়ে দিল।

 মেয়ের এখন সংসার হয়েছে, চাকরি হয়েছে ,এখন অনেক ব্যস্ত জীবন কাটায় সে।

 সময় কোথায় বাবাকে এক মিনিট ফোন করে জিজ্ঞেস করার

 বাবা তুমি কেমন আছো?

 বাবা ডাকটা বোধহয় না শুনতে না শুনতে ভুলেই যাচ্ছি

তুমিও আর নূরীর বাপ     নূরীর বাপ বলে ডাকো না।

 আমার ভাই দুজন, বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে।

 তাদের বাড়ি, গাড়ি কিছুরই অভাব নাই যে।

  তোমার কি মনে হয় না আমি মারা গেছি।  জানি হেসে উড়িয়ে  দিবে।

 আমার কথা তবু বিশ্বাস কর, কাফনের কাপড় যেদিন তোমায় জড়াতে হয়েছে,

 সেইদিনই তো আমার মৃত্যু হয়েছে।

 এখন যেটুকু বাকি আছে সেটা তো আমার দেহ।

 তোমরা খোঁজিই  নাও না আমার কেহ।

 এই শোনো না তোমার কবরের পাশে আমার থাকার ঘরটা ঘেঁষে কতগুলো গন্ধরাজ লাগিয়েছি।

 জানো ওদের সাথেই এখন বেশি কথা বলি।

 ওরা আমার সব কথা বোঝে আমায় একবেলা না পেলে নূরীর  বাপ   নুরীর বাপ  বলে খোঁজে ।

আমি ফুলের বাগানে যাই,, তোমার শরীরের  মিষ্টি গন্ধটা এখনো পাই।

বার বার প্রশ্ন করি নিজেকে- তুমি কি মিশে গেছ গন্ধরাজ এর ভিড়ে?

 

আর তাই আমি প্রচন্ড ফুলকে ভালবাসি।

খোদা কি বলবেন সেই ভয়ে, নয়ত কবর খুদে কবেই  ‍ঢুকে যেতাম তোমার কবরের পাশে।

দেখতে দেখতে তোমায় ছাড়া আমার কেটে গেল বত্রিশ বছর।

চলনা আবার নতুন করে এই ফুলেদের মাঝে বাধি আমাদের প্রেমের শহর।

সেই প্রথম দিন থেকে আজ জীবনের শেষ বিন্দুটিতে এসে

তোমার জন্যই বলি- আমি প্রচন্ড ফুলকে ভালবাসি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ