ফিরে আসা

 

কাম ব্যাক



প্রথম দৃশ্য

( হেলাল, হাসিব, তপু, সাকিব ,আয়ান তারা পাঁচ বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছে তাদের রুমে আর পার্টি       চলছে।রমজানের প্রথম দিন, রাত তখন ১২ টা)

 হেলালঃ   নেশা লাগিলোরে হাসিবের চোখে নেশা লাগিলোরে

হাসিব ভীতু ঋতুর  প্রেমে মজিল রে নেশা লাগিলোরে

বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিলোরে

 নেশা লাগিলোরে তপুরে ছ্যাকা দিয়া জরিনা পালায়রে

 নেশা লাগিলোরে সব শালারা প্রেমের নেশায়  দৌড়াইয়া মরে।

 

 সাকিবঃ    মামা একদম ঠিক  গাইছ।  গানটা তুমি অসাধারণ গাও মামা।

 হাসিবঃ    যা অনেক কষ্ট করে গাইলি , নে এখন আরেক প্যাক মাইরা দে।

 হেলালঃ    আরে খা, তরাই খা।   কি ঘোড়ার ডিম আনছ এত টাকা দিয়া !  বললাম হুইস্কি নিয়ে আয়।

 তপুঃ       ঐ  হাসিব  আ্যান্টি  তরে কখন থেকে ফোন দিচ্ছে দেখস  না?

 হাসিবঃ     হ্যালো আম্মা  আসসালামুআলাইকুম। কেমন আছেন?

 হাসিবঃ    না আম্মা খাই নাই,  খাবো।  জি, নামাজ পড়ে আসছি মসজিদ থেকে এখন একটু সবাই মিলে         আড্ডা দিতেছি। আচ্ছা তাহলে সেহেরীর সময় কথা হবে। আল্লাহাফেজ।

 হেলালঃ   কিরে তুই মিথ্যা কথা বললি কেন?  আন্টিকে বললি নামাজ পড়ে আসছিস।  তুই নামাজে গেছিস  কখন?  মিথ্যা বলা ভালো না একদম সহ্য হয় না আমার । খারাপ আর ভাল যা করবি সাহস নিয়া বলবি।  মিথ্যা  বলবি কেন? মিথ্যা হল সকল পাপের জননী বুচ্ছস?

 হাসিবঃ     আসছে, নিজে এক মাতাল আবার আমারে পাপ শিখাইতে আসছে।

 হেলালঃ    বুঝে কথা বল, তুই মিথ্যা বলিস এটা তোর অত্যন্ত খারাপ একটা স্বভাব।

 হাসিবঃ     তুমি যে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে হোটেলে থাকো সেইটা তোমার খুব ভালো স্বভাব । তাই না?

 হেলালঃ    শোনো সেইটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়।  আর আমি কি ওদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করি না কি?

সাকিবঃ     দাঁড়া দাঁড়া ইচ্ছার বিরুদ্ধে এক্কাদোক্কা খেললে গুনা হবে আর সম্মতিতে এক্কাদোক্কা খেললে গুনা হয়না!!

 হেলালঃ    হ্যাঁ তাইতো।

 সাকিবঃ    শালা- ভন্ডামি বাদ দাও।  নিজে নিজে হাদিস বানায়া ফেল।   ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক এক্কাদোক্কা খেলার শাস্তি পাইতেই হইবো।

 হেলালঃ     শাকিব শোন তুই এত  হাদিস কোরান বুঝিস,  তাহলে যখন  সুদে মানুষরে  টাকা হাওলাত দিস তখন তোর হাদিস কই যায়?  সুদ খাওয়া ইসলামে হারাম জানিস না?

সাকিবঃ     আমি কি জুলুম করি নাকি, চাপ দিয়ে তো আর টাকা আদায় করি না।  সুতরাং সমস্যা কই? হেলালঃ     আসছেরে  চাপ দিয়ে নাও  আর  এভাবেই  নাও  সুদতো সুদই।

তপুঃ       হইছে এবার তোরা থাম।  সব মানুষেরই  ভালো মন্দ নানা দিক আছে। শোন কালকে হেলাল      লালে লাল হয়ে প্যান্টের চেইন খুলেই ডেট করতে গেছিল। হা হা হা হা ( সবাই মিলে হাসাহাসি)  চল এখন তাস খেলি।

সাকিবঃ     নেশার লাঠিম ঝিম ধরেছে ভাবলে হবে কি।

       হেলালের পেটে রাসনার বেবী কেউ জানে নি।

তপুঃ          কি গান গাস উল্টাপাল্টা। অফ যা।  

আয়ানঃ    তোদের  কথাগুলো এতক্ষণ শুনলাম।  আর ভাবছিলাম  কেন আমরা দুনিয়াতে আসলাম? আমাদের কি করনীয়?  আজকে থেকে রোজা শুরু।  সবাই আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাইবে। আর আমরা গান-বাজনা আর পার্টি করা নিয়ে ব্যস্ত।  চল সবাই ঘুমাতে যাই আর ভালো লাগছে না রে।

 তপুঃ     ওরে আমার মক্কার কারী সাহেব আসছেন । তুই ঘুমা হেলাল চল ছাদে যাই, রাতের দুষ্টু মিষ্টি হাওয়া খায়ে আসি।  

হাসিবঃ  আমিও যাবো  তোদের সাথে । চল চল

 

 

 

                                                                        দ্বিতীয় দৃশ্য

 

(বাড়ির ছাদ,  হেলাল হাসিব আর তপুর কথোপকথন,  সময় রাত ১.৪৫ মিনিট)

 

হাসিবঃ    তপু

তপুঃ     বল কি বলবি। 

 হাসিবঃ      আম্মার সাথে নামাজ নিয়ে মিথ্যা বলাটা  ঠিক হয়নি তাই না?

হেলালঃ      এখন তো বলেই ফেলছিস।  যা হয়েছে বাদ দে।   চল একটা খেলা খেলি।  তিনজনে ছাদের কিনারে  দাঁড়ায়া  প্রস্রাব করি।  কে কত দূরে নিয়ে ফেলতে পারে।

 তপুঃ        তোর মাথায় শয়তানি বুদ্ধি।  যা  শালা। নতুন ছাদ সাইডে রেলিং নাই। বাদ দে।

হাসিবঃ     আমারে মনে হয় ধরছে রে।  বমি বমি লাগছে,  আচার খাইলে হয়তো ভালো হতো।

হেলালঃ     এটুকুতেই  ধরে ফেলে কি খাওয়া শিখেছ ।  না খেলায় আমার সাথে হারবি বলে ভাব নিচ্ছ মামা।

 তপুঃ        হাসিব তুই বিশ থেকে উল্টো দিক থেকে গুনতে পারবি?

হাসিবঃ      বিশ,ঊনিশ, আঠারো, সতের, ষোল, পনের,।

হেলালঃ     আরও দ্রুত গুনতে হবে। এত আস্তে সবাই পারেবে।

হাসিবঃ        বিশ,ঊনিশ, আঠারো, সতের, পনের, ষোল, তের।

তপুঃ          হা হা হা হা, গেছেরে ।

হাসিবঃ       যা চল তোদেরকে  পি খেলায় হারায়া দিব।

তপুঃ          না দরকার নাই।

হেলালঃ      ও  পারলে তোর সমস্যা কি তপু?   চল যাই।

তপুঃ          খেলা শুরু। হাসিব তুই আর সামনে যাস না। পেছনে আয়। হাসিব পিছিয়ে আয়।  হায় আল্লা হাসিব পড়ে গেছে নিচে দৌড়া দৌড়া।


 

তৃতীয় দৃশ্য

  (হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে হাসিব, চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কিন্তু কিছুই বলতে পারছেনা)


 তপুঃ     তোর জন্য হেলাল, আজকের এই অবস্থার জন্য তুই দায়ী।  কেন তুই এইসব উল্টাপাল্টা বুদ্ধি বের করতে গেলি।  হেলাল তোর জন্যই  এইসব হলো।

 সাকিবঃ     ডাক্তার বলেছেন  হাসিবের মাথায় প্রচন্ড আঘাত  লেগেছে।  মারাত্মক কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে

আয়ানঃ      হাসিবের ভাইরে ফোন দিয়ে বললাম সব,  তারা ঢাকায় আসতে  আরো ঘন্টা দুই ঘন্টা সময় লাগবে। 

তপুঃ          কি হয়ে গেল আল্লাহ তুমি রহম কর।

হেলালঃ      সব আমার দোষ, সব আমার দোষ। তোরা আমারে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেল।

তপুঃ        ( হেলালের শার্টের কলার ধরে)  শালা আর কথা বলিস না।  সব সময় খারাপ যত চিন্তা  তর মাথায় আসে।  তুই সব শুরু করস, এখন  আর কথা বলিস না।

সাকিবঃ     আরে ছাড় ছাড় কি শুরু করলি তোরা আগে তো ওরে বাঁচাতে হবে পরে ঝগড়া ঝাটি করিস।

(চার বন্ধু হাসপাতলের বারান্দায় ঘুরাফেরা করে আর কান্নাকাটি করে)

হেলালঃ      আয়ান  বিপদে পড়লে যে কি একটা আয়াত আছে ভুলে গেছি মনে করাইয়া দে।

আয়ানঃ     লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালেমিন।

(  হেলাল পাগলের মত হাসপাতালের বারান্দায় এই মাথা থেকে মাথা ছোটাছুটি করে আর জিকির করে) বন্ধু আমার মন বলছে হাসিব ভালো হবে।  হাসিব ভালো হবে।


 

চতুর্থ দৃশ্য


(আড্ডার সেই রুম,  হেলাল কোরআন তেলাওয়াত করছে। আজ  হাসিবের এক্সিডেন্টের প্রায় বিশ  দিন চলে গেল।  হঠাৎ কলিং বেল বাজল)


 তপুঃ     ও আচ্ছা সাকিব আসছিস। কি অবস্থা হসপিটালে? ভাইয়ারা  চলে গেছে?

আয়ানঃ     তুই তাহলে রেস্ট নে। আমি এখন যাই।

সাকিবঃ      ভাইয়া আছে সমস্যা নাই, তুই থাক।

হেলালঃ      তোরা ফ্রেশ হয়ে আয়, কথা আছে এক সাথে বসবো।

তপুঃ       দেখ আজকে আমরা সবাই আছি শুধু হাসিব নেই।  হয়তো আমাদের কাজকর্ম ভালো ছিলো না রে আল্লাহ  এই জন্য একটা শাস্তি দিয়েছে।  আর এই শাস্তি শুধু ওর একার উপর পড়লো!!

হেলালঃ      সবাই  বস।  শোন প্রত্যেকটা ভালো কিছু শুরু হয় কষ্ট, যন্ত্রণা দিয়ে । প্রতিটি বিজয় আসে নানা ত্যাগ এর  মধ্য দিয়ে।  আমি আর আক্ষেপ করি না । যা হয় ভালর জন্যই হয়।   অতিরিক্ত কিছুই ভালো না আমরা যেভাবে চলছিলাম তা আসলে অতিরিক্ত । তাই আল্লাহ এই রমজান মাসে  আমাদের হেদায়েতের  রাস্তা খুলে দিয়েছেন হাসিবের এক্সিডেন্ট এর মাধ্যমে  হেদায়েতের সুয়যাগ। মানুষ জানে না কোনটা তার জন্য ভাল কিন্তু খুব ভাল করেই জানেন কোনটা তার বান্দার জন্য ভাল আর কোনটা খারাপ ।

( চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কিছুক্ষণ চুপ থেকে)  তোদের সবার সামনে তওবা করছি-  আমি আর খারাপ কাজের প্রতি ফিরেও তাকাব  না । নেশা জাতীয় কোন কিছুই আর স্পর্শ করব না । নারীসঙ্গ থেকে সরে আসলাম সব উল্টাপাল্টা কাছ থেকে সরে আসলাম।  আল্লাহ তবুও তুমি হাসিবকে ভালো করে দাও।  ফিরে আসলাম আলোর পথে ফিরে আসলাম।

তপুঃ       বন্ধু আমিও পুরাপুরি নিয়ত করেছি আর কোন বাজে কাজে না এখন থেকে ভালো ভাবে জীবন যাপন করব।

আয়ানঃ      আমাদের প্রত্যেকের কোনো-না-কোনো একটা দিক ভালো কোনটা খারাপ।  তাই আমরা যদি একে অপরকে সহযোগিতা করি তাহলে অবশ্যই  আমাদের খারাপ দিকগুলো আমরা উপ্রে ফেলতে পারবো। ভালো ভাবে জীবন-যাপন করতে পারব তাই আজকে থেকে আমরা সবাই মিলে নতুন ভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখি চল।  অন্তত হাসিবের  জন্য হলেও আমরা সঠিক পথে চলার চেষ্টা করব।


                                                                        সমাপ্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ