কেন ব্যায়াম বা পরিশ্রম সাধ্য কাজ করার পর দুধ খাওয়া উচিৎ ?

 আমরা সবসময় শুনে এসেছি দুধ একটি সুষম খাবার। এর কারণ হলো এর মধ্যে রয়েছে নানা পুষ্টি গুনাগুন। দুধে রয়েছে  ভিটামিন এ, ডি, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফ্যাটি এসিডসহ আরও অনেক পুষ্টি উপাদান। যা মানুষের দাঁত হাড় গঠনে, ওজন কমাতে, ত্বকের যত্নে, মানসিক চাপ দূর করতে, কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে, মাংসপেশি গঠনে ইত্যাদি নানা প্রকার কাজ করে মানুষকে সুস্থ ও সবল রাখে। তবে কখন কিভাবে দুধ খেলে শরীরের জন্য বেশি কার্যকর হবে তা জানা উচিত প্রত্যেক দুধ সেবনকারীকে। সেই প্রয়াসকে প্রাধান্য দিতেই আজকে আলোচনা করবো ব্যায়াম বা পরিশ্রমসাধ্য কাজের পর কেন এবং কতটুকু দুধ খাওয়া প্রয়োজন।

কেন ব্যায়াম বা পরিশ্রম সাধ্য কাজ করার পর দুধ খাওয়া উচিৎ ?


 

 

কেন দুধ খাওয়া উচিৎ

 

 ব্যায়াম বা প্রচুর পরিশ্রম করার পর আমাদের শরীর থেকে ঘামের সাথে  অনেক পানি বের হয়ে যায়। যে কারণে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।

·         তাই দুধ আপনাকে হাইড্রেটেড( জলযেজিত) বা  পানিশূন্যতা দূর করে রাখে।

 

·          ব্যায়াম বা পরিশ্রমসাধ্য কাজের পর আপনার শরীরে পুনরায় শক্তি উদ্যমতা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।

 

·         প্রোটিনের যোগান দিয়ে পেশিগুলো কার্যক্র করে।

 

·          ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে।

 

·          শরীরের সঠিক তরল ভারসাম্য বজায় রাখে।

 

·         প্রোটিনের যোগান দিয়ে পেশিগুলো কার্যক্র  ও ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ  করতে ইলেকট্রোলাইটের(পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম ) প্রয়োজন যা দুধে রয়েছে যথাযথভাবে।

 

·         দুধ একটি চমৎকার হাইড্রেট কারণ এতে ৮৭  শতাংশ পানি থাকে এবং এতে থাকা ইলেক্ট্রোলাইট পটাশিয়াম সোডিয়াম ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

 

·         দুধে  স্বাভাবিকভাবেই কেসিন এবং হুই নামে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন রয়েছে। কেসিন পেশীসহ অন্যান্য শরীরের টিস্যুগুলোর ভাঙ্গন রোধ করে । হুই প্রোটিন পেশী  বৃদ্ধি এবং পুনর্গঠনে সহায়তা করে। কেসিন এবং হুই প্রোটিন উভয়ই অ্যামাইনো এসিডে ভেঙ্গে যায়, যা পরবর্তীতে রক্তে শোষিত হয় এবং সারা শরীরে বাহিত/ছড়িয়ে যায়, যা পেশিগুলোকে পুনর্গঠন করতে সহায়তা করে।

 

·           ঘাস খাওয়া গরুর দুধে থাকে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড (CLA)  পূর্ণ।  CLA  হলো একটি ফ্যাটি এসিড যা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ থেকে সুরক্ষা করে। তাই ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ এর নানা সমস্যা দূর হতে পারে যদি আপনি পরিশ্রম করার পর দুধ সেবন করেন।

 

·         ১০০ শতাংশ  ঘাস খাওয়ানো জৈব দুধে  চমৎকার কিছু পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে যেমন-ওমেগা-৩, উচ্চ পরিমাণে CLA  এবং ভালো ওমেগা সিক্স থেকে তিন অনুপাত অনুসারে। ঘাস খাওয়া জৈব দুধে নিয়মিত দুধের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি CLA  রয়েছে। তাই দুধ সেবনকারীদের উচিৎ ঘাস খাওয়া গরুর খাঁটি দুধ খাওয়া।

 

·          যারা ব্যায়ামাগার বা জিম এর প্রশিক্ষক তারা সকলেই ব্যায়াম এর পর প্রোটিন শেক গ্রহণ করার জন্য সাজেস্ট করে থাকেন। সেক্ষেত্রে প্রোটিন শেক গ্রহণ করার জন্য দুধ হচ্ছে অত্যন্ত উৎকৃষ্ট এবং উপাদেয়।

 

·         ব্যায়ামের অন্তত দুইঘন্টা পর ভারী খাবার খাওয়া উচিৎ। কিন্তু মাঝের এই সময়টুকুতে ক্ষুধা নিবারণের জন্য দুধ সেবন করলে ভাল। কেননা দুধ খেলে পেট ভরা লাগে।

 

 তাই ব্যায়াম বা পরিশ্রমসাধ্য কাজ করার পর দেহের পানিশূন্যতা দূর করতে,  পেশীগুলোর ভাঙ্গন রোধ করতে,  পুনরায় উদ্যম ও শক্তি ফিরে পেতে , প্রোটিন শেক  হিসেবে, কোলেস্টেরল কমাতে, ক্ষুধা নিবারণের জন্য,শরীরের তরলের ভারসাম্য রক্ষা করতে ইত্যাদি কারনে ব্যায়াম বা পরিশ্রম সাধ্য কাজ করার পর দুধ খাওয়া অত্যন্ত কার্যকরী ও উপকারী।

 

 

কতটুকু দুধ খেতে হবে

 

কতটুকু দুধ খাওয়া দরকার তা ডিপেন্ড করবে কে খাচ্ছে তার উপর। যেমন যার গ্যাসট্রিক বা আলসার  এর সমস্যা আছে ও যাদের এলার্জি আছে তাদের দুধ খাওয়া নিষেধ। যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে তাদের দুধ খেতে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। আবার যাদের ল্যাকটেজ নামক এনজাইম এর অভাবে আছে এমন রোগীদেরও দুধ খাওয়া উচিৎ নয়।

তাছাড়া একজন সুস্থ মানুষ ব্যায়াম বা পরিশ্রম সাধ্য কাজ করার পর এক বা দুই গ্লাস দুধ খাবেন। কিন্তু কেউ যদি দুধ খেতে অপছন্দ করে সে ক্ষেত্রে অল্প অল্প করে সময় নিয়ে দুধ খেতে পারেন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ