কেন মানুষ প্রেম করে?

অনুভূতি কি, ভালোবাসা কি, কেন মানুষ ভালবাসে এবং প্রেম কাকে বলে, কেন মানুষ প্রেম করে মানুষের এসব নানা প্রশ্ন নতুন নয়। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ এসব প্রশ্ন করে আসছে। যার উত্তরে অনেকের অনেক মতবাদ বা মতভেদ রয়েছে। কেউ বলে প্রেম মানে বেদনা, কেউ বলে সুখ, কেউ বলে হাজারো যন্ত্রনা, কেউ বলে প্রতীক্ষার আশায় বেধেছি এই বুক। তাই সুখ কিংবা কষ্ট যে যাই বলুক মানুষ প্রেম করে এবং করবে।

কেন মানুষ প্রেম করে? প্রেম কাকে বলে


 
প্রত্যেক মানুষই তার নিজের মত করে প্রেম, ভালবাসার ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। তাই এর সঠিক সংজ্ঞা, ব্যাখ্যা, কারণ এবং যুক্তি দাড় করানো একটু কঠিন। তাই সকলের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই আমরা আজকে আলোচনা করবো কেন মানুষ প্রেম করে। আসলে প্রেম হচ্ছে চূড়ান্ত ফলাফল তাই এর আগে আমাদেরকে জানতে হবে অনুভূতি কি, ভালোবাসা কি, কি জন্য ভালবাসা জন্মায় এবং ভালোবাসার সমন্বয়ে কিভাবে ও কেন প্রেম হয়।

 

 ভালোবাসা দেখা বা ছোঁয়া যায় না একে অনুভব করতে হয়। তবে সে অনুভব টাই প্রকাশ পায় ব্যক্তির বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে। এক পক্ষ অপর পক্ষের জন্য ভালোবেসে নানা কাজ করলে আমরা বুঝতে পারি ভালবাসার গভীরতা কতটুকু। অর্থাৎ ভালোবাসার গভীরতা হয়ত পরিমাপ বা অনুধাবন করা যেতে পারে কিন্তু ভালবাসাকে কখনও ছোঁয়া যায় না বা দেখাও যায় না।

 

 কোন একটা ছেলে হারিয়ে গেছে, তখন তার প্রিয়সি হয়তো তার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে। সে কখন আসবে? সে কখন আসবে? ফিরে এলে তার সাথে সুখের ঘর বাঁধবো। সে অন্য কাউকে বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করতে পারত কিন্তু সে তা না করে প্রিয় মানুষটির জন্য অপেক্ষা করছে। একদিন সে ফিরে আসবেই, এই বিশ্বাস বুকে ধারণ করে। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ছেলেটি ফিরে এলো। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় পরিবারের চাপ, সামাজিক কটুকথা, শরীরের চাহিদা, সকল চাওয়া গুলো কে উপেক্ষা করে সে অপেক্ষা করছে সেই প্রিয় মানুষটির জন্য। যদি বাঁচতে হয় তবে সে মানুষটিকে নিয়ে বাঁচবো, এই প্রতিজ্ঞা ধারণ করে।  এই যে এত চাপ, ত্যাগ, কষ্ট, যন্ত্রনাকে সহ্য করে প্রিয় মানুষটির জন্য অপেক্ষা তাতেই প্রকাশ পায় ভালবাসার গভীরতা। তাই ভালোবাসা হচ্ছে মানুষের মনের আবেগ অনুভূতির একটা রুপ, যেখানে নিজের কিছু চাওয়াগুলোকে/ ভালোলাগাগুলো কে পাওয়ার জন্য মানুষ দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। আর যখন মানুষ কাউকে ভালোবাসে তখন সে তার মনের মত করে সাজিয়ে নিতে চায় প্রিয় মানুষটিকে।

 

আসলে মানুষ জন্মগতভাবেই কিছু অনুভূতি নিয়ে জন্মায়। মায়া-মমতা, স্নেহ, অন্যের প্রতি যত্নশীল, অন্যকে সহযোগিতা, সহমর্মিতা, অন্যের সুখে সুখী হওয়া, অন্যের ব্যথায় কষ্ট পাওয়া, রাগ, অভিমান, আনন্দ, হাসি, কান্না, কষ্ট ইত্যাদি অনুভূতিগুলোকে মানুষ প্রকাশ করতে চায়। তাই এমন কিছু মানুষ বেছে নেয় বা এমন কাউকে সে বেছে নেয় যার মাধ্যমে যেটি/যাকে আশ্রয় করে সে এই অনুভূতি গুলোকে ভাগাভাগি করে নিতে পারবে। আর এই অনুভূতিগুলো প্রকাশের/ ভাগাভাগির জন্য অন্য কোন কিছুর সাপেক্ষে মানুষ যে কাজ করে তাই হচ্ছে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।  তাই ভালোবাসা হচ্ছে মানুষের চিরন্তন, শাশ্বত, জন্মগত মনে বা মস্তিষ্কে উৎপন্ন কিছু অনুভূতি যা সে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করতে চায়, নিজের মত করে।  এতক্ষণে আমরা বুঝতে পেরেছি যে ভালোবাসা হচ্ছে অন্যের প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ বা নিজের অনুভূতি প্রকাশের জন্য অন্যকে বেছে নেয়া। নর-নারী, ছেলে-মেয়ে, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রতিটি জীবের মধ্যেই এই অনুভূতিগুলো রয়েছে। প্রত্যেকটি মানুষ তার নিজের মতো করে এই অনুভূতি গুলোকে প্রকাশ করতে চায়। পৃথিবীতে আমরা কেউ একই রকম নই, কেউ লম্বা, কেউ বেটে, কেউ আবার মোটা, কেউ কাল, কেউ ফর্সা ইত্যাদি নানা ধরনের নানা বর্ণের ভিন্ন ভিন্ন মানুষ পৃথিবীতে রয়েছে। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের থেকে আলাদা। ঠিক একই রকম করে প্রত্যেক মানুষের চাওয়া পাওয়া গুলো ভিন্ন-ভিন্ন। আর যে কারণেই মানুষের ভালোবাসাগুলোর ধরনও হয় ভিন্ন ভিন্ন।  ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কারণেই মানুষ আলাদা আলাদা জিনিস কে পেতে চায়। আলাদা আলাদা ভাবে সে তার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে চায়। 


যদি উদাহরণ হিসেবে বলি একজন ছেলে সে হয়তো একটি মেয়েকে পছন্দ করে্। সেই মেয়েটি হচ্ছে কাল, কিন্তু তার চুল অনেক লম্বা। আবার অন্য আরেকজন ছেলে পছন্দ করে একজন ফর্সা মেয়েকে হয়তো তার চুলই নেই। তবুও সে তাকে পছন্দ করে এবং তার সাথে অনুভূতি প্রকাশ করতে চায় এবং তাকে সে ভালোবাসে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে ভালোবাসার ধরনগুলো হয়  আলাদা আলাদা। কেউ হয়ত খুব রাগী, আবার কেউ শান্ত, কেউ আবার দয়ালু আর কেউ কঠোর। এখন দয়ালু হয়ত রাগীকে পছন্দ করতে পারে আবার নাও পছন্দ করতে পারে । আর এইখানেই হলো মানুষের বৈচিত্রতা। মাহান আল্লাহতালা তাই বলেই দিয়েছেন আমি বৈচিত্র করে তোমাদের তৈরী করেছি। তাই নানান বৈচিত্রতার মাঝেই মানুষ মানুষকে ভালবাসে।

 তাই কে কাকে কোন কারণে ভালবাসতে পারে ব্যক্তি নিজেও অনেক সময় জানে না।  আর এই বিভিন্ন ধরনের ভালোবাসা যখন একে অন্যের প্রতি প্রকাশ করে তখনই হয় প্রেমের বহিঃপ্রকাশ। একজন অপরজনকে ভালবেসে হয়তো ফুল দিয়েছে কিন্তু অপরজন হয়তো ফুল পছন্দ করে না সে হয়তো চায় তার প্রিয় মানুষটি তাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে ভালোলাগা বা অনুভূতি প্রকাশের প্রক্রিয়া বা চাওয়াগুলো ভিন্ন, তাই প্রিয় মানুষটি যদি তাকে নিয়ে ঘুরতে যায় তার পছন্দ গুলোকে প্রাধান্য দেয়, সম্মান করে, তখনই দুজনের মধ্যে এক ধরনের সখ্যতা গড়ে উঠবে। আর এই যে দুইজনের ভালোবাসার সম্মিলিত একটি সখ্যতা বা একটি সম্মিলিত সেতুবন্ধন সেটিই হচ্ছে প্রেম। তার মানে দাঁড়াচ্ছে দুই পক্ষের বা একে অন্যের প্রতি যে ভালোবাসা প্রকাশ করে সেই ভালোবাসা যখন সম্মিলিত বা একসাথে অনুভূতি বা অভিব্যক্তি প্রকাশ করার জন্য একটা পথ খুঁজে নেয় সেটাই হচ্ছে প্রেম।

 

 সারকথা হচ্ছে মানুষ নিজের আবেগ, অনুভূতি গুলোকে প্রকাশ করতে চায়, সেই কারণে সে অন্যকিছু/অন্যকে আশ্রয় করে। আর এই অন্যকে আশ্রয় করার মাধ্যম হচ্ছে ভালোবাসা। আর যখন এই ভালোবাসা প্রকাশ করে এবং অপরপক্ষ সেই একই রকম ভাবে তার ভালোবাসা প্রকাশ করে তখনই তাদের মধ্যে যে যোগাযোগ, টান, অনুভূতি শেয়ার করার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয় তাই হচ্ছে প্রেম। তাই প্রেম হতে পারে জীবের সাথে জড়, মানুষের সাথে মানুষের, মানুষের সাথে তার প্রিয় বস্তুর, বাবার সাথে সন্তানের, প্রতিবেশীর সাথে প্রতিবেশীর, আত্মীয়ের সাথে অনাত্মীয়ের, ধনীর সাথে গরীবের, প্রাণীর সাথে প্রাণীর ইত্যাদির মধ্যে। তবে মনে রাখতে হবে প্রত্যেক প্রেমের চাওয়া- পাওয়াগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয় এবং সেই সাথে সম্পর্কভেদে প্রেম প্রকাশের আচরণগুলোও হয় আলাদা আলাদা।

জীবের জন্মগত অনুভূতি               অনুভূতির প্রকাশ         ভালবাসা         একাধিক পক্ষের ভালবাসার সমন্বয়  

প্রেম

 

প্রেম = ভালোবাসা + ভালোবাসা

কেন মানুষ প্রেম করে? প্রেম কাকে বলে
 

 



কেন মানুষ প্রেম করে

 

 

 সময় অতিবাহিত করা বা (টাইম পাস করা)

যদিও আমরা অনেকেই মজা করে বলি আরে টাইম পাস এর জন্য প্রেম করি কিন্তু কথাটা মোটেই মজা নয় বরং এটাই চিরন্তন সত্য। হ্যাঁ, মানুষ সময়কে অতিবাহিত করার জন্যই প্রেম করে। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে জন্ম-মৃত্যুর টাইমফ্রেমে বেঁধে দিয়েছেন। মানুষ জন্মানোর পর প্রকৃতির নিয়মেই বড় হতে থাকে এবং সে সময় অতিবাহিত করে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। কিন্তু এই জন্ম-মৃত্যুর মাঝখানের সময়টাতে সে কি করবে? তাই আল্লাহ কিছু চাহিদা, কামনা, কাজ, দায়িত্ব-কর্তব্য ইত্যাদি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। প্রতিটা সময় অতিবাহিত করার জন্য মানুষ কিছু না কিছুর অবলম্বন খুঁজে, যা করে বা অর্জনের মাধ্যমে অথবা যার সাপেক্ষে সে এই একটা সেকেন্ড অতিবাহিত করে অন্য আর একটা সেকেন্ড বেঁচে থাকে।  মানুষ তার সময়কে কাটানোর জন্য যে অবলম্বন গুলো খুঁজে বের করে এবং সেই অবলম্বনের সাথে যে মিতালী গড়ার মাধ্যমে একাত্ম হয় তাই প্রেম। যখন একটি বাচ্চা ছোট থাকে তখন সে তার বাবা-মার কাছে নানা বায়না ধরে। ধরি, একটি বাচ্চা ছেলে সাইকেল কিনলো। সেই সাইকেল নিয়ে সে ঘুরেফিরে, আর সেই সাথে মনের মধ্যে নানা কল্পনা তৈরি করে। আর মনের মধ্যে একটা আনন্দ পায়, যেটাকে সে উপভোগ করে। এই যে সাইকেলের জন্য তার আকাঙ্খা এবং সেই সাথে সাইকেলও তাকে সঙ্গ দিয়ে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে এখান থেকে ওখানে। এই করে ছেলেটি সাইকেলের সাথে সময় কাটিয়ে তার বাল্যকাল অতিবাহিত করে। ঠিক তেমনি কোন একটা বন্ধু বা বান্ধবীর সাথে পুতুল খেলে, কানামাছি খেলে বাচ্চাটি তার শৈশব অতিবাহিত করে। তার মানে হচ্ছে সাইকেল, বন্ধু, বাবা-মা, পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে কিছু একটা করে বা আদান-প্রদানের মাধ্যমে বাচ্চাটি তার শৈশবের সময়কে অতিবাহিত করে। তেমনি সেই বাচ্চাটি যখন কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে তখন তার চাহিদার পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তনের সময় সে অন্য কোন ব্যক্তি, বস্তু, চিন্তা ও কাজ নিয়ে মেতে থাকতে পছন্দ করে এবং মনের মধ্যে আনন্দ কে উপভোগ করে। অর্থাৎ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের যে সময়টা তা অতিবাহিত করতেই মানুষ প্রেম করে। সেই প্রেম ব্যক্তি, বস্তু, চিন্তা,কাজ, শখ বা  যেকোনো বিষয়ের সাথে হতে পারে। তাই কোন কিছুকে অবলম্বন করে তার সাথে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বা আদান-প্রদানের মাধ্যমে মনের চাওয়াগুলোকে পূরণ করে সময়কে অতিবাহিত করতেই মানুষ প্রেম করে।

 

 

চাহিদা পূরণ

 যখন ছোট ছিলাম তখন আসিফ আকবরের বাঁচবো না মরে যাব ওপারে চলে যাবো পৃথিবীকে জানিয়ে বিদায় গানটি ছিল খুবই প্রিয়। আমি যখন এই গান শুনতাম আমার আম্মা তখন বলতো কি গান বাজাচ্ছিস! আমারো পরানো যাহা চায়, ভেঙে মোর ঘরের চাবি, ইত্যাদি গানগুলো দে। তখন মেজাজ খারাপ হতো, যে আম্মা এইসব কি গান শুনে কোন তাল নাই, নাই কোন উদ্যম। কিন্তু আজ ৩৫ বছর বয়সে বুঝি যে আসলে এইটাই হচ্ছে বয়সের চাহিদা। এখনো শিল্পীরা এমন ধাপাধাপি মার্কা ফাটাফাটি গান বের করে কিন্তু ভুল করেও কখনো কখনো শুনতে ইচ্ছা করে না। এখন শুনি মানুষ মানুষের জন্য, তুমি রবে নীরবে, কে যাস রে ইত্যাদি গান। অর্থাৎ বয়সের সাথে সাথে মানুষের চাহিদা গুলো পরিবর্তন হয়। যে বাচ্চাটি ১২ বছর বয়সে মনেপ্রাণে সাইকেলের প্রেমে পড়েছিল সেই ছেলেটি ২৫ বছর বয়সে কোন এক রমণীর আলিঙ্গনের মধ্যে নতুন এক বাসনা খুঁজে পেতে চায়। আহা কেউ যদি হাতটি ধরতো, কেউ যদি পাশে বসে বলতো কাজ করো মন দিয়ে, কেউ যদি বলতো মাথার চুল এইভাবে কেন রেখেছো, কেউ যদি বলতো এই সব জামাকাপড় আর পড়বে না আমি পছন্দ করে কিনে দেবো। আহা কতই না ভালো হতো। এই পরিবর্তনগুলো কিসের ইঙ্গিত দেয়? ১২ বছর বয়সে কেন এমন মনে হল না? কত মেয়ে বান্ধবীর সাথেই তো রাত দিন একাকার করে খেলাধূলা করেছে ছেলেটি। কখনো তো এমন মনে হয়নি যে ও যদি আমার পাশে থাকতো, কাছে এসে একসাথে বসে কিছু কথা বলতো। আসলে এসব হচ্ছে সময় অতিবাহিত করার সাথে সাথে মানুষের চাহিদাগুলোর পরিবর্তন।  কৈশোর বয়সের আগে যে ছিল হয়তো শুধুই বন্ধু কৈশোর আসতে না আসতেই তখন তাকে নিয়ে মনের কোণে তৈরি হয়েছে সারা জীবন একসাথে থাকার বাসনা। আবার আমার আম্মা এখন আমার দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে সারাদিন খেলাধুলা করে ওদের সাথেই রাগ অভিমান করে। বাসায় ফিরলে ছেলেটা তার দাদির বিরুদ্ধে নালিশ করে আর আমার আম্মা হেসে হেসে নাতির বিরুদ্ধে নালিশ করে। সময়কে উপভোগ করার জন্য দাদি নাতির এই যে প্রেম-ভালোবাসা তাও কিন্তু সময়ের চাহিদা।



অনুভূতিগুলোকে ভাগাভাগি

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মনেই সুপ্ত কিছু অনুভূতি থাকে, যা প্রথমেই বলা হয়েছিল। হাসি-কান্না, কষ্ট, আনন্দ, অভিমান, হিংসা, গর্ব, অহংকার, অনুরাগ, যত্নশীল ইত্যাদি নানা অনুভূতিগুলো জন্মগতভাবেই মানুষ পেয়ে থাকে। আর সভাবতই মানুষ অনুভূতি প্রকাশ করতে চায়। মানুষ চায় সুখ-দুঃখ, আনন্দ নিজে অনুভব করতে এবং অন্যের সাথে ভাগাভাগি করতে। কোন একটা কষ্ট অন্যের কাছে শেয়ার করতে পারলেই মন হালকা হয়ে যায়। তখন  ভেতরে একটা তৃপ্তি অনুভব হয়। ধনী-গরীব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সুস্থ-অসুস্থ ইত্যাদি সকল প্রকার মানুষই তার অনুভূতি গুলোকে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করতে চায়। সেই কারণেই মানুষ বন্ধু বা সঙ্গী বেছে নেয়। যে তাকে বুঝবে, তার মনের ভালোলাগা-খারাপলাগা গুলোকে অনুভব করবে। যেহেতু পৃথিবীর প্রতিটি সম্পর্কের মধ্যেই কিছু না কিছু আচরণগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে তাই মানুষ তার আলাদা আলাদা প্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন মানুষ, বস্তু, বিষয়কে অনুভূতি ভাগাভাগি করার জন্য বেছে নেয়। যে ছেলেটি ১২ বছর বয়সে সাইকেলকে বেছে নিয়েছিল তার আনন্দকে ভাগাভাগি করতে। ঠিক সেই ছেলেটি ২৮ বছর বয়সে অনুভূতি ভাগাভাগি করার জন্য নিজের স্ত্রী বা সঙ্গিনীকে বেছে নেয়। একজন ছেলে তার মার সাথে যে অনুভূতি গুলো শেয়ার করবে নিশ্চয়ই তার বন্ধুর সাথে অন্য কোন চাওয়া-পাওয়ার অনুভূতি শেয়ার করবে। ঠিক তেমনি প্রতিটি সম্পর্কের যে সীমাবদ্ধতা তা আলাদা আলাদা হওয়ায় মানুষ ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি ভাগাভাগি করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি, বস্তু বা বিষয়ের সাথে প্রেম করে থাকে।

 


সহযোগিতা পাওয়ার জন্য

 মানুষকে প্রতিনিয়ত কোন না কোন কাজ করতে হয়। আর মানুষ কম্পিউটারের মত একসাথে অনেক কাজ করতে পারে না। কম্পিউটার যেমন নতুন ট্যাব ওপেন করে একই সময়ে একাধিক কাজের ফলাফল দিতে পারে, মানুষ কিন্তু সেই রকমভাবে একই সময়ে অনেক কাজ করতে পারে না। তাই মানুষ নিজের কাজের জন্য কারো না কারো ওপর নির্ভরশীল। একে অন্যের সহযোগিতার ফল স্বরূপ আজকের এই সভ্য ও আধুনিক পৃথিবীর আমরা পেয়েছি। মানুষ তার কাজে-কর্মে ও চিন্তায় অন্যের সহযোগিতা নেয় আর সে কারণেই সে এমন একজন মানুষকে বেছে নেয় যে তার কাজে সহযোগিতা করবে। একটি কাজ একজনে করলে যে সময় লাগবে ঠিক সেই কাজ দুইজনে করলে এর অনেক কম সময় লাগবে। আবার একজন ব্যক্তি প্রত্যেক কাজেই অভিজ্ঞ হতে পারেন না। তাই কাজ সঠিক ও সুন্দরভাবে করার জন্য অভিজ্ঞ কারও না কারও সহযোগিতা দরকার। তাই মানুষ তার কাজের সহযোগিতার জন্য বিশ্বস্ত কাওকে বেছে নেয়। যেমন কোনো গৃহিণী যদি রান্নাবান্না সন্তান লালন-পালন করেন অন্যদিকে গৃহকর্তা চাকরি বা ব্যবসা করে পরিবার চালানোর অর্থ উপার্জন করেন। এখানে একজন এর পক্ষে বাহিরের সকল কাজ করে রান্নাবান্না, সন্তান লালন-পালন, বাড়িঘর দেখাশোনা ইত্যাদি সকল কাজ করা সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষের জীবনে যেমন অর্থ প্রয়োজন তেমনি মাথা গুঁজে থাকার মত একটা ভালো বাড়ি ও সন্তান উৎপাদনের মাধ্যমে সুখের সংসার করাও প্রয়োজন।  তাই মানুষ তার কাজে সহযোগিতার জন্য কাউকে না কাউকে বেছে নেয় যাকে সে তার চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সম্মিলিত কাজ করার জন্য বিশ্বাস করতে পারে। আর সেই মানুষটির সাথেই গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক।

 

 

 চলতে চলতে মিলে যাওয়া থেকে প্রেম

 মানুষ সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে একসাথে বসবাস করে আসছে সেই প্রাচীন কাল থেকেই। সেই একসাথে চলার পথে আপনি যেমন চান তেমনি যদি আর একজনকে পান, তখন আপনি এবং তার মধ্যে গড়ে ওঠবে সম্পর্ক। ধরা যাক কোন একটা স্কুলে দুইটি ছেলে চুপচাপ স্বভাবের যেখানে অন্য ছেলেরা দুষ্টামি আর হৈচৈ করা নিয়ে ব্যস্ত তারা দুজনই চুপচাপ। তখন দেখা যাবে যে এই দুজন ছেলের মধ্যে বন্ধু হিসেবে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠবে। একে অন্যকে বুঝে বলেই তারা দুজন একসাথে চলবে, একসাথে টিফিন খেতে যাবে, ঘুরতে গেলে একসাথে যাবে। অর্থাৎ আমি যেমন থাকতে পছন্দ করি তেমন কোনো আর একজন যদি সঙ্গী পাই তখন তার সাথেই সম্পর্ক গড়ে উঠবে। আবার কোন একটি মাত্র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্যও উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। যেমন একটি ছেলে খুব দুষ্টু এবং অন্যজন চুপচাপ। কিন্তু দুজনই মানুষকে সহযোগিতা করতে খুব পছন্দ করে। আর ঠিক এই একটি কারনেই সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে একটি ছেলে একটি মেয়েকে হয়তো খুব পছন্দ করে। সে চায় মেয়েটি তাকে সময় দিক, কথা বলুক, মেয়েটির চুপচাপ শান্ত স্বভাবের হোক। কিন্তু মেয়েটি একটু উশৃংখল স্বভাবের। আনন্দ-ফুর্তি, হইচই নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে সে। অন্যদিকে মেয়েটি হয়তো অন্যকে সহযোগিতা করার মানসিকতা রাখে যে কারণে ছেলেটি শুধু এই একটি কারণেই মেয়েটির সাথে বন্ধুত্ব/প্রেম করতে চায়। তাই একজনের সাথে অন্যজনের সব কিছুর মিল থাকলেই যে প্রেম হবে এমন না অমিল থাকলেও প্রেম হতে পারে। তাই চারিত্রিক নানা বৈচিত্রের মাঝেও একসাথে চলতে চলতে মানুষ ব্যক্তি, বস্তু, বিষয়ের প্রেমে পড়তে পারে। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বা জীবনবোধের মিল যেমন প্রেমের কারণ হতে পারে তেমনই অমিলও প্রেমের কারণ হতে পারে। আর এটা নির্ভর করে উভয়ের আদান-প্রদানের উপর।েআমার পরিচিত একজন ভাই আছে যাকে তার মা-বাবা জোড় করেই বিয়ে দিয়েছিল। তার যে মেয়ের সাথে বিয়ে হয়েছিল তাকে তার মোটেই পছন্দ ছিল না কারণ সে অন্য আর একজন মেয়েকে পছন্দ করত। কিন্তু মজার ব্যাপার হল আজ ১০ বছর তাদের সংসার জীবন অতিবাহিত হয়েছ। আর ভাই এখন বলে আল্লা যা করে ভালর জন্যই করে। তোদের ভাবীই আমার জন্য পারফেক্ট। সেই ভাই এখন বউ ছাড়া কিছুই বোঝে না আর ভাবীর ব্যাপারে হরহামেশাই প্রশংসা করে। এখানে তারা একসাথে চলতে চলতে উভয়ের পছন্দ অপছন্দ মিলেমিশে একাকার হয়ে তাদের মধ্যে গভীর প্রেম তৈরী হয়েছে। তাই মানুষ একসাথে চলতে চলতে মিল অমিল যাই থাকুক না কেন তাদের মধ্যে প্রেমের বন্ধন গড়ে উঠতে পারে।


 

স্বার্থের কারণে প্রেম

 আমরা প্রায়শই শুনি নিঃস্বার্থ প্রেম এর কথা। আসলে প্রকৃতপক্ষে নিঃস্বার্থ প্রেম কখনো হয়না। মানুষ যখন কিছু পেতে চায় তখন কিছু আশা করে। ধরি সাইকেলের প্রেমে আসক্ত যে ছেলে সেই ছেলেটি সাইকেল চালিয়ে তার মনে একটা আনন্দ উপভোগ করে। এই সাইকেল এর মাধ্যমে আনন্দটা উপভোগ করাই তার প্রেমের উদ্দেশ্য। আবার সেই ছেলেটির যখন বয়স ত্রিশ হবে তখন নিশ্চয়ই সেই সাইকেলের প্রতি আসক্তি থাকবে না। কেননা বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার চাওয়া-পাওয়ার পরিবর্তন হয়েছে। তাই এখন সে হয়তো মোটরসাইকেল কিনতে চাইবে। মোটরসাইকেলই এখন তার প্রেম। ঠিক তেমনি আমাদের সমাজে অনেক ছেলেকে আমি বলতে শুনেছি যে আমি ওকে নিঃস্বার্থ ভালোবাসি। কথাটা সত্য যে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা হয়। কেননা ভালোবাসা এক পক্ষের একতরফা আবেগ অনুভূতি বা চাওয়া। কিন্তু যখনই এটা প্রেমে রূপ নিতে চাইবে তখনই স্বার্থ জড়িয়ে যাবে। ছেলেটি মেয়েটিকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চায় আর তখনই সেই ভালোবাসা প্রেমের রুপ নেয়। ছেলেটি বিয়ে করতে চায় এই জন্য যে, সে তার পরিবার গঠন করবে, সংসার করবে, বাচ্চাকাচ্চা জন্ম দিবে, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিবে। আর এইসব উদ্দেশ্য পূরণের জন্যই সে প্রেম করতে চায়। ভাললাগা বা ভালোবাসা হচ্ছে একজনের বা একপক্ষের চাওয়া-পাওয়া কিন্তু প্রেম হচ্ছে দুই পক্ষের চাওয়া-পাওয়া। প্রেম হচ্ছে উভয়ের ভালোবাসার মধ্যে এক অলিখিত চুক্তিপত্র। আর চুক্তিপত্র মানেই তো কোন না কোন চাওয়া-পাওয়া বা আদান-প্রদান। আর এই আদান-প্রদানই হলো প্রেম। তাই মানুষ নিজের চাওয়া পাওয়ার যে স্বার্থ তা পূরণের জন্য প্রেম করে। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা হলেও নিঃস্বার্থ প্রেম কখনো হতে পারে না। কেননা প্রেম মানেই কোনো না কোনো চাওয়া-পাওয়া বা স্বার্থের দেয়া-নেয়া।

উপরে উল্লেখিত কারণ ছাড়াও আরও কিছু অবস্থা বা প্রক্রিয়ার প্রেক্ষিতে প্রেম হতে পারেঃ

১. সময়কে কেন্দ্র করে প্রেম।

২. পরিবেশ- পরিস্থিতির উপর নির্র করে প্রেম।

কেন মানুষ প্রেম করে?

৩. বয়সভেদে প্রেম।

৪. সময়বেদে প্রেম।

৫. ইন্দ্রিয়ের চাহিদাভেদে প্রেম।

৬.স্থানভেদে প্রেম।

৭. উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য প্রেম।

৮. জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রেম।





নর নারীর প্রেম


আমরা সাধারণত প্রেম মানেই দুজন নর-নারীর মিলন কে বুঝে থাকি। প্রেম শব্দটা শোনামাত্রই হয়তো মজনু সাহেব কিংবা লাইলি ম্যাডামের ছবিটা হৃদয় পটে ভেসে ওঠে। প্রেম শুনলেই হয়তো প্রিয় মানুষটির চেহারা মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে যায়। কিন্তু কেন এমন হয়? আসলে মানুষ কোন কিছুই করত না যদি তার কোনো চাহিদা না থাকতো। আর একজন মানুষের প্রথম ও প্রধান চাহিদা দুই ধরনের হয়ে থাকে

১. পেটের চাহিদা বা ক্ষুদা

২. যৌন চাহিদা

 মানুষের জীবনে এই দুইটি চাহিদা প্রবল ভাবে কাজ করে। বলতে গেলে একজন মানুষ যা কিছু করে তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই দুটি চাহিদা। পেটের যে ক্ষুধা তার নিবারণ এর যাত্রা শুরু হয় জন্মের পর থেকেই। মায়ের বুকের দুধ পান করা দিয়ে যে যাত্রা শুরু হয় তার শেষ হয় মৃত্যুর সময় হয়তো মুখে পানি দেয়ার মাধ্যমে। তাই বেঁচে থাকার জন্য এই চাহিদা মানুষকে পূরণ করতেই হয়।

অপরদিকে যৌন চাহিদার জন্যই পৃথিবী আজও টিকে আছে। আদম আর হাওয়া যদি মিলিত না হতেন তাহলে হয়তো পৃথিবীতে আজ ৭৫০ কোটি মানুষই আসত না। আর তাদের মতো করেই পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিটি নর-নারীর মিলনের মাধ্যমেই তৈরি হয়েছে আজকের পৃথিবী। কিন্তু এই নর-নারীর মিলন এর উদ্দেশ্য কি? তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করার মাধ্যমে নিজের শরীর ও মনের একপ্রকার সুখ এবং অপরদিকে বংশ বিস্তার করার নিমিত্তে সন্তান জন্ম দেয়া। তাই, যদি যৌন চাহিদা না থাকতো তাহলে নর-নারী মিলিত হতো না। আর মিলিত না হলে তো মানুষের প্রজন্মের পর প্রজন্ম তৈরিই হতো না। শুধু নর-নারী কেন প্রকৃতির প্রতিটি জীবকেই সৃষ্টিকর্তা জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের মধ্যে দিয়েছেন মিলিত হওয়ার ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কৌশল ও চাহিদা। তাই এক কথায় বলা যায় যে, যৌন চাহিদাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম তৈরি করে পৃথিবীকে টিকিয়ে রেখেছে। সে কারণেই মানুষের মধ্যে এর প্রভাব এত প্রবল। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে চিন্তা-চেতনা, বিবেক-বিবেচনা, বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তখন সে বুঝতে পারে কোনটা তার প্রয়োজন, কোনটা গুরুত্বপূর্ণ, কি করা উচিৎ এবং কি করা উচিৎ নয়। তাই যখন একটা চাহিদা পৃথিবী কে টিকিয়ে রেখেছে সে ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব কেমন হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর মানুষ প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনে সেই বিষয়টা নিয়েই মেতে থাকে বা থাকতে চায় যা তার কাছে প্রয়োজন ও গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে যেহেতু মানুষের চাহিদা বা গুরুত্বের বিষয়বস্তুও পরিবর্তন হয়। যখন একটি ছেলে বা মেয়ে বাল্যকালে থাকে তখন তার কাছে খুব গুরুত্বের বিষয় হচ্ছে বন্ধুবান্ধবের সাথে খেলাধুলা করা। আবার যখন সে কৈশোরের পর যৌবনে প্রবেশ করে তখন তার শরীর বৃত্তীয় নানা পরিবর্তন হয়, সেই পরিবর্তনই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আসক্তি তৈরি করে। আর এ আসক্তি আবার একটা বয়স পর্যন্ত প্রবল থাকে এবং পরবর্তীতে আস্তে আস্তে কমতে থাকে। মানুষ যেহেতু যৌবনের সময় শক্তি-সামর্থ্য চিন্তা-চেতনা ও সামাজিকতা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে বিকাশ লাভ করে ও পরিপক্ক হয়। তাই ঐ সময়ের চাওয়া-পাওয়াগুলো হয় উল্লেখযোগ্য আর গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই পরিপক্ক বয়সের অন্যতম চাওয়া হচ্ছে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আসক্তি, যা তৈরি হয় যৌন চাহিদা, সময়কে ভাগাভাগি, অনুভূতির ভাগাভাগি, প্রজন্ম তৈরি ইত্যাদি নানা কারণে। আর তাই চিরন্তন ও শাশ্বত এই নর-নারীর প্রেম হাজার হাজার বছর ধরে আল্লাহ প্রদত্ত হিসেবেই টিকে এসেছে এবং পৃথিবী যতদিন আছে ইনশাল্লাহ ততদিন প্রেম টিকে থাকবে।

 

প্রেম নিয়ে বিজ্ঞান কি বলে

 প্রেম-ভালোবাসা এইসব কিছুই হরমোনের খেলা। যুক্তরাষ্ট্রের রটার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলেন ফিশার বলেন প্রেমের তিনটি স্তর। এই তিনটি স্তরেই মানুষের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন হরমোন নিঃসরণ হয়। আর এই স্তর গুলো হলো

১. ভালোবাসার ইচ্ছা

২.আকর্ষণ

৩. সংযুক্তি

 

 এইসব হরমোন নিঃসরণের কারণেই মানুষ একে অন্যের সাথে প্রেম করে।

 ১. ভালোবাসার ইচ্ছাঃ এটি প্রেমের প্রথম স্তর। এই স্তরে মানুষের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোলাগা তৈরি হয়। তখন ছেলেদের ক্ষেত্রে টেসট্রোন এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণ হয়।

২. আকর্ষণঃ কাউকে দীর্ঘদিন ধরে ভালো লাগার ফলে তার প্রতি একধরনের আকর্ষণ বোধ সৃষ্টি হয়। এই আকর্ষণ স্তরে তিনটি নিউরোট্রান্সমিটার কাজ করে। নিউরোট্রান্সমিটার হলো এক ধরনের এন্ডোজেন রাসায়নিক যা এক স্নায়ুকোষ থেকে অপর স্নায়ুকোষে সংকেত প্রদান করে।

·         অ্যাড্রিনালিনঃ এটি প্রেমে পড়ার প্রাথমিক অবস্থাতে কাজ করে। এই পর্যায়ে অ্যাড্রিনালিন গ্রন্থি ও কর্টিসলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে যার ফলে প্রিয় মানুষটিকে দেখলে বা তার সঙ্গে কথা বলার সময় শরীরের ঘাম ঝড়ে এবং হৃদপিন্ডের গতি বেড়ে যায়, গলা শুকিয়ে যায় ইত্যাদি।

·          ডোপামিনঃ এই হরমোন ব্যক্তির মধ্যে কোন কিছু পাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। ডোপামিন এক ধরনের ভালোলাগার অনুভূতি তৈরি করে যা মনের মধ্যে অপ্রকাশিত আনন্দ তৈরি করে। এক ফোঁটা কোকেন মস্তিষ্কে যে পরিমাণ উত্তেজনা তৈরি করতে পারে ডোপামিনও সেই রকম উত্তেজনা তৈরী করে। এর নিঃসরণ বেশি হলে শক্তি বাড়ে, খাবার চাহিদা কমে, ঘুম কমে যায় কিন্তু তখন মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

 

·          সেরোটোনিনঃ কেন কখন আপনি প্রেমে পড়বেন তা এই গুরুত্বপূর্ণ এই হরমোনটি নির্ধারণ করে।

 

৩. সংযুক্তিঃ এটি হচ্ছে প্রেমের শেষ স্তর। দীর্ঘকাল একসঙ্গে থাকার পর দুজন দুজনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। একসাথে চলার জন্য নিজেদের মধ্যে কাজ, দায়িত্ব ভাগাভাগি করে পরবর্তী কোন উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। মানুষ যেমন চায় সব সময় তাকে সেরকমই পেতে হয় তা কিন্তু নয়। পাওয়া না পাওয়ার মাঝেও বৃহৎ কোন স্বার্থের কারণে একসাথে পথচলতে থাকে মানুষ। এই সংযুক্তি স্তরে অক্সিটোসিন ও ভেসোপ্রেসিন নামক হরমোন তৈরি হয় মস্তিষ্কে।

 

 

 তাই সব কথার শেষ কথা হচ্ছে হরমোন নিঃসরণ হোক আর যেকোন কারণবশতই হোক মানুষ প্রেম করে এসেছে সেই সৃষ্টিরসূচনালগ্ন থেকে যা এখনও অব্যাহত আছে সেই একই গতিতে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ কখনো না কখনো প্রেমে পড়েছে এবং প্রেম করেছে। প্রেম মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ তাই মানুষ প্রেম ছাড়া বাঁচতে পারবে না। হয়ত মানুষ একে অন্যের প্রেমে না পড়লেও কোন বস্তুর প্রেমে, ব্যক্তির প্রেমে, কোন উপাদান, শখ, ইচ্ছা পূরন বা প্রিয় কোন জিনিসের প্রেমে পড়বেই। তাই বিজ্ঞান দিয়ে হোক কিংবা আমাদের মতামত দিয়ে, আমরা যে যেভাবেই প্রেমকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করি না কেন প্রেমের মধ্যে রয়েছে অপ্রকাশিত নানা রহস্য। তাইতো-

 

প্রেম চিরন্তন প্রেম শ্বাশত

প্রেমই মুক্তি প্রেমই ভষ্ম

প্রেম নিজেকে উজার করে অন্যের তরে বিলীয়ে দেয়া

আবার প্রেম অন্যকে পরম যত্নে আপন করে আগলে রাখা।

প্রেম মানে মুক্তির সীমাহীন আনন্দ

প্রেম মানে তোমার আমার ভাল থাকার দ্বন্দ্ব।

প্রেম মানে জীবাত্মা আর পরমাত্মার মিলন

প্রেম মানে সুখে আর দুঃখে গড়া রহস্যময় ভূবন।

প্রেম মানে তোমার আমার অদৃশ্য চুক্তি

প্রেম দিয়ে ভেঙ্গে যাক মানা নামানা সকল যুক্তি।

প্রেম থাকে আর্তনাদের চিৎকারের পাশে

প্রেম থাকে শততলা দালানকে ঘেষে।

প্রেম দিয়ে হোক শাসন-বারণ এর ধ্বংস

প্রেম নিয়ে বারুক সদ্য জন্মলাভ করা শিশুটির বংশ।

প্রেমই গড়ে তোমাকে আমাকে নতুন করে

প্রেমের সুরে মানবতার গান গাইবো আপন সুরে।

তাই যতদিন রইবে এই বিশ্ব ভূবন

প্রেম দিয়ে মানুষ মানুষকে রাখবে করে আপন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ