কিভাবে বুঝবেন আপনি ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী?

স্বাস্থ্য যে সকল সুখের মূল তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাই যখন আমরা অসুস্থ হই। আমাদের কাছে যত সম্পদ আর টাকা-পয়সাই থাকুক না কেন যখন আমরা অসুস্থ হই তখন সব কিছুর বিনিময়ে আমরা সুস্থ হতে চাই। সামান্য মাথা ব্যাথা বা দাঁতে ব্যাথা হলেই আমরা সহ্য করতে পারি না। আর বড় কোন অসুখ হলেতো আর কথায় নেই, দুঃসহ জীবন।  তাই স্বাস্থ্য যে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তাতে নিশ্চয়ই কারও  আপত্তি থাকার কথা নয়। তাই স্বাস্থ্যকে ভাল রাখার জন্য মানুষ কত কিছুই না করে। যে যাই করুক না কেন তাকে প্রথমেই জানতে হবে আমি কি ভাল আছি? আমি কি ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী?

কিভাবে বুঝবেন আপনি ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী?


 

আমরা যখন নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করি, শারীরিক পরিশ্রম, নিয়মিত বিশ্রাম ও পরিমীত ঘুমায় তখন আমাদের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। এছাড়াও মানসিক অবস্থা ভাল থাকলে, দেহে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ভাল থাকলে, কাজ করার স্পৃহা থাকলে বুঝতে পারি আমাদের স্বাস্থ্য ভাল আছে। তবে কয়েকটি বাহ্যিক লক্ষণ দেখে বুঝতে পারি আমাদের স্বাস্থ্য ভাল আছে কি না। সেইসব বাহ্যিক লক্ষণ গুলোই এখন আলোচনা করবো।


 

ভাল স্বাস্থ্যের বাহ্যিক লক্ষণ:

 

মাংসপেশী

 

সুস্থ ও ভাল স্বাস্থ্যের  অধিকারী হিসেবে আমরা বডি বিল্ডারদের চিনে থাকি। কিন্তু কেন?  এর অন্যতম কারণ হচ্ছে তাদের মাংসপেশী প্রথমে আমাদের নজর কাড়ে। তারা ব্যায়াম কারার মাধ্যমে তাদের পেশীগুলোকে দৃঢ় এবং সবল রাখে। আর হ্যা, যখন আমরা কারও মাংসপেশী দৃঢ় ও সবল দেখব তখন ধরেই নিব তিনি ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী।

 

 দেহত্বক

আমাদের মধ্যে কেউ আছে ফর্সা কেউ আছে কাল আবার কেউ শ্যাম বর্ণ কিন্তু যে যে বর্ণের হয়ে থাক না কেন, আমরা যখন কাউকে অসুস্থ দেখি তখন দেখা যায় তার চোখ মুখ এবং ত্বক কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে আছে। তাকে পরিচ্ছন্ন লাগছেনা এবং ত্বকও মসৃণ লাগছেনা। তাই ভাল স্বাস্থ্যের মানুষের ত্বক হবে পরিচ্ছন্ন এবং মসৃণ। তাই আমাদের বুঝতে হবে যখন কারো দেহত্বক পরিচ্ছন্ন এবং মসৃণ থাকে তখন তিনি ভালো স্বাস্থ্যের মানুষ। ফর্সা কিংবা কাল তা মূল বিষয় নয়, মূল বিষয় হচ্ছে দেহত্বক থাকবে পরিচ্ছন্ন ও মসৃণ।

 

চুল

আমাদের অনেকেই অনেক কাটিং এর মাধ্যমে চুল কাটেন। কেউ চুল বড় রাখেন, কেউ ছোট,এখন কেউ কেউ আবার কালার করেন কিন্তু চুল ভালো আছে কিনা তা বোঝার জন্য বুঝতে হবে চুল স্বাভাবিক উজ্জ্বল এবং মসৃণ কিনা। যদি কারো চুল শুষ্ক হয় বা রুক্ষ হয় তখন কালো উজ্জ্বল ভাবটা থাকবে না এবং অনেকের আবার লালচে হয়ে যায়। তাই যদি কারও চুল স্বাভাবিক উজ্জ্বল এবং মসৃণ দেখায় তখন বুঝে নিতে হবে তিনি ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী।

 

 চোখ

চোখ যে মনের কথা বলে। চোখ তখনই ঠিকঠাক কথা বলে যখন চোখ সুস্থ থাকে। আমরা যখন কোন অসুস্থ মানুষের দিকে তাকাব তখন দেখতে পারব তার চোখ মলীন, চোখের নিচে কাল দাগ পড়েছে। তাই ভাল স্বাস্থ্যের মানুষের চোখ হবে কালিমা বিহীন ও স্বচ্ছ।


 

দেহভঙ্গি

আমরা তাকেই ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হিসেবে চিহ্নিত করবো যার দেহভঙ্গি হবে সাবলীল, কাঁধ ও ছাতি হবে চওড়া, পেট সমতল এবং দেহভঙ্গি হবে উন্নত। আমরা যখন কোন পেটুক মানুষ দেখি তখন তাকে ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী বলি না, আবার কারো হাত হচ্ছে লিকলিকে, আবার কারো শরীর মনে হয় যেন মাঝখানে ভেঙে যাচ্ছে। তাই দেহভঙ্গি হবে এমন যেন তাকে দেখে মনে হবে শক্তি-সামর্থ্য সম্পন্ন একজন মানুষ, আর তাকেই বলবো সে ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী। ভালো স্বাস্থ্যের জন্য যে মোটা হতে হবে বা অনেক বড়সড় দেহ বিশিষ্ট হতে হবে তেমন নয় কিন্তু। হ্যাংলা পাতলা মানুষও হতে পারে ভাল স্বাস্থ্যসম্পন্ন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দেহভঙ্গি হবে সাবলীল ও সামঞ্জস্যপূর্ণ।

 

মনোভাব

যে সব সময় অস্থির, ধীর স্থির নয় তাকে আমরা কোনোভাবেই ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী বলতে পারিনা। কেননা ভালো স্বাস্থ্য সম্পন্ন মানুষ কখনো অস্থির হবেন না তিনি শান্ত এবং ধীর-স্থির হবেন। চিন্তা ভাবনা করে কথা বলবেন এবং তিনি চুপ থেকে কথা বলার চাইতে কথা শুনবেন বেশি। আর যিনি এমন ধীর-স্থির মনোভাব প্রকাশ করবেন তাকে ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী বলে বিবেচনা করতে হবে।

 

 ঘুম

মানুষের জীবনে একটা অন্যতম সময় হচ্ছে ঘুমের সময়। যদি একদিন কেউ ঠিকমত না ঘুমায় তাহলে পরের সারাটা দিন তার শরীর ঠিক থাকবে না। কেমন যেন শক্তিহীন আর নিরস লাগবে সব কিছু। তাই সুস্থ মানুষ নিয়মিত ঘুমাবে। সেই সাথে পরিমীত পরিমাণ ঘুমাবে। মূল কথা হচ্ছে সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত ঘুমাতে হবে আর যে নিয়মিত ঘুমায় তাকে আমরা বলতে পারি তিনি সুস্থ ও ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী।

 

 পরিপাক

আমরা প্রতিদিনই খাওয়া-দাওয়া করি সুস্থ থাকার জন্য বা বেঁচে থাকার জন্য।  কিন্তু অনেকেই আছেন যাদের ঠিকঠাক পরিপাক হয় না। কারো আছে গ্যাসের সমস্যা, কারো আছে বদহজমের সমস্যা, আবার কারো আছে আমাশয়ের সমস্যা, কারও আছে পেটে বুটবুট সমস্যা । তার মানে দাঁড়াচ্ছে খাবার ঠিকমতো পরিপাক হচ্ছেনা। তাই যে ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী তার পরিপাকে কোন সমস্যা হবে না।


 আরো পড়ুনঃ সুখ আসলে কী?


আহার

যার আহারে থাকবে সুরুচি তাকে বলব আমরা ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী। যে ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী সে কখনো উল্টা-পাল্টা খাবে না। সে সব সময় শাকসবজি, ফলমূল এবং পুষ্টিকর খাবার খাবে। তার শরীরে ভিটামিনের চাহিদা সহ অন্যান্য চাহিদা পূরণ করবে পুষ্টিকর খাবার খেয়ে। আর যে কারণে তার আহারে থাকবে সুরুচি এবং সে নিয়মিত পরিমাণমতো খাওয়া-দাওয়া করবে আর তাতেই আমরা বুঝে যাবো তিনি কতটুকু ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী।

 

হাবভাব

 একজন মানুষের হাবভাব দেখে বুঝে যাওয়া যাবে যে তিনি সুস্থ আছেন কি অসুস্থ। একজন মানুষ যখন স্বাভাবিক এবং স্বাছন্দে সবার সাথে কথা বলে, হাসিখুশি থাকে এবং অন্যের সাহায্যে এগিয়ে যায় বা  অন্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে ও অন্যকে সময় দিতে কখনো কার্পন্য করে না তখন তাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হিসেবেই ধরা হয়। সেই সব মানুষগুলোর হাবভাব থাকে অনেক সতস্ফূর্ত ও অনেক প্রাণবন্ত। তাই তাদেরকে আমরা ধরে নেব যে তিনি ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী। তাই হাবভাব স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দপূর্ণ হওয়াই হচ্ছে ভালো স্বাস্থ্যের অন্যতম লক্ষণ।

 

 সর্বোপরি কথা হলো, স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল তাই স্বাস্থ্যকে ভাল রাখতে আমাদের যা করণীয় তাই করবো। এই পণ নিয়ে যদি কেউ জীবন অতিবাহিত করে তাহলে সে সুখী হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই ভালো স্বাস্থ্য বুঝার জন্য আমরা যে যে বিষয় গুলো লক্ষ্য রাখবো তা উপরে আলোচিত হয়েছে। যদি কেউ এই প্রত্যেকটি বিষয়ে যথাযথ হয় তবে তাকে পুরোপুরি সুস্থ ও ভালো স্বাস্থ্যের মানুষ হিসেবে আখ্যা দেয়া যায়। তাই প্রশ্ন রইল আপনি কি ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী? 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ