রোজা রেখে কি ইনহেলার নেয়া যাবে? এককথায় উত্তর হ্যাঁ। রোজা রেখে আপনি ইনহেলার নিতে পারবেন। কেন নিতে পারবেন তা নিয়ে আলোচনা হবে।
আমরা মুসলমানরা ধর্মীয় করণীয় কাজ গুলো ব্যাপারে প্রায় সময়ই খুব সিরিয়াস থাকি। কারণ সত্যিকারের মুসলমান মানেইতো আল্লাহতালার প্রতি ভীতি এবং তার হুকুম মেনে কাজ করা। তাঁর খুশী মানেইতো আমাদের প্রকৃত মুক্তি।
আর আমরা তাই আল্লাহ তালার হুকুম পালনে অনেকে খুব উদ্বিগ্ন হয়ে যাই। ইসলাম হলো এমমাত্র ধর্ম যা মানুষের আচরণ থেকে শুরু করে ঘুমানো পর্যন্ত সমস্ত কিছু নিয়ে বলেছে যে কোনাটা আমরা করতে পারিআর কোনটা আমরা করতে পারি না।
আর সেজন্যই ইসলাম হলো পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। আর আল্লাহতালার হুকুম পালনে ধর্মপ্রাণ মুসলমান যেহেতু খুব সিরিয়াস সেই জায়গা থেকেই আমরা কি করতে পারি আর কি করতে পারি না তার একটা সিদ্ধান্তহীনতায় প্রায়শই ভূগী।
তেমন একটা কাজ হচ্ছে রোজা রেখে ইনহেলার গ্রহণ। রোজা রেখে কি ইনহেলার নেয়া যাবে কীনা তা নিয়ে নানা মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু এর একটা সমাধানই এখন আলোচনা করতে যাচ্ছি।
রোজা রেখে কি ইনহেলার নেয়া যাবে
রোজা রেখে কি ইনহেলার নেয়া যাবে কী না তা জানার আগে প্রথমেই একটা বিষয় আমাদের জানা উচিৎ।.ইসলামের সকল নিয়ম-কানুন মানুষের ভালোর জন্য। ইসলামে এমন একটা নিয়ম বা করণীয় কাজও নাই যেগুলো মানুষকে কষ্ট দেয়ার জন্য। এখন কথা থাকতে পারে যে তাহলে সারাদিন না খেয়ে রোজা রাখা কী কষ্টের না?
হ্যাঁ, তা কষ্টের। কিন্তু না খেয়ে আছেন তা কষ্ট লাগলেও একজন মানুষের সুস্থ থাকার জন্যি এই না খেয়ে থাকা অনেক উপকারের । তা কী আপনার জানা আছে? রোজার উপর গবেষণায় জাপানের বিজ্ঞানী নবেল পেয়েছেন। ফাস্টিং এর উপকারিতা ছিল তার গবেষণা। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে যে রোজা মানুষের সুস্থ্য থাকার জন্য খুবই জরুরি ও উপকারী। এখন কী বলবেন, ইসলাম এর নিয়ম আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে?
বিষয়টা হচ্ছে ডাক্তার যখন রোগীকে ভাল করার জন্য ইনজেকশান দেয় তখন রোগী ব্যাথা পায়। কিন্তু রোগী যদি বলে যে আমাকে ডাক্তার ব্যাথা দিয়েছে তখন তাকে কী বলবেন।
তাকে বলতে হবে আরে পাগল তোকে ভাল করার জন্যই ডাক্তার সাহেব তোকে ইনজেকশান করেছে। ঠিক রোজার সময় যে কষ্ট তা আমাদেরকে ভাল রাখার জন্যই সাময়িক ব্যাথা মনে হতে পারে। আদতে তা হচ্ছে মানুষের জন্য উপকারের।
কিন্তু রোজা কী আল্লাহ সবার জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন?
না সবার জন্য রোজা বাধ্যতামূলক নয়। কিভাবে তা বলছি। ধরুন একজন মানুষ মারাত্মক অসুস্থ তার কী রোজা রাখতেই হবে? না তাকে রোজা রাখতে হবে না তখন। কিন্তু তাকে সুস্থ হওয়ার পর সেই রোজা রাখতে হবে। তার মানে আল্লাহ কত সহজ করে দিয়েছেন রোজাকে। আল্লাহু আকবার।
রোগীদের মধ্যে কেউ আছে মরণাপন্ন, কেউ আছেন হালকা অসুস্থ, কেউ আছেন সাময়িক অসুস্থ, আবার কেউ আছেন সবসময়ই অসুস্থ তবে সবসময় তীব্রতা সমান নয়।
এই চার ধরণের রোগীদের জন্য আল্লাহ আদেশ চার রকম হবে। যে মুমুর্ষু তার জন্য রোজা রাখতে হবে না। আর যে হালকা অসুস্থ তাকে রোজা রাখাতে হবে। আর যিনি সারা বছর ধরে অসুস্থ, তাকে অসুস্থতাকে নিয়ন্ত্রন করে চলতে হয়। তার জন্যও ভিন্ন হুকুম রয়েছে।
মহান আল্লাহতালার হুকুম ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার একটাই কারণ তা হলো মানুষের কল্যাণ, মঙ্গল, শান্তি। যে মানুষ রোজা রাখার সামর্থ আছে তাকে অবশ্যই রোজা রাখতে হবে।
আর সে যদি ইচ্ছা করে রোজা না রাখে বা অসুস্থতার দোহায় দেয় তাহলে আল্লাহতো অন্তরযামী। কে কি চিন্তা করেন আল্লাহতো তাও জানেন। তাই তাঁর সাথে দুই নাম্বারী চলে না কি?
এখন আসি যিনি সারাবছর অসুস্থ যার অসুস্থতা নিয়ন্ত্রন করে চলতে হয়। তার ক্ষেত্রে আল্লাহ কী হুকুম দিবেন? তেমনই একটি অসুস্থতা হলো এ্যাজমা, হাঁপানী, শ্বাসকষ্ট।
আরো পড়ুনঃ
রোজা রেখে চোখে ড্রপ দেয়া যাবে?
রোজা রেখে ইনহেলার নেয়ার সমাধান
আমরা যারা শ্বাসকষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি তাদের শ্বাসকষ্ট কী মাত্রায় তা বুঝতে হবে প্রথমে। যদি এমন হয় যে দিনের বেলায় ইনহেলার না নিলে থাকা যায় তেমন কোন প্রবলেম নাই তাদের রোজা রেখে ইনহেলার নিতে পারেন।
আর যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশী। কোনভাবেই থাকা যাচ্ছে না তাদের ক্ষেত্রে ইনহেলার নিতে পারবেন। এবং ইনহেলার কোন খাদ্য বা পানীয় নয়। এটাতো একপ্রকার গ্যাস। যেমন অক্সিজেন একপ্রকার গ্যাস। অক্সিজেন নিলে কী রোজা ভেঙে যাবে? না কখনোই না। ঠিক তাই শ্বাস নেয়ার জন্য ইনহেলার নিলেও রোজা ভাঙবে না।
তবে যদি এমন হয় যে ইনহেলার না নিলে হচ্ছে তাহলে না নেয়ায় ভাল। আর আপনার ডাক্তার কী বলে তার উপর নির্ভর করে আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন। যদি এমন হয় যে ইনহেলার সন্ধ্যায় ও রাতে নিলে হচ্ছে তাহলে রাতে ও সন্ধ্যায় ইনহেলার গ্রহণ করবেন।
আর যদি ডাক্তার বলেন যে দিনের বেলায়ই ইনহেলার নিতে হবে তাহলে দিনেই নিবেন এবং রোজা যে তাতে ভাঙবে না তা বিশ্বাস রেখেই ইনহেলার গ্রহণ করবেন।
আশা করি রোজা রেখে ইনহেলার নেয়া যাবে কী তার ব্যাপারে আপনাদের ধারণা পরিষ্কার। সবচেয়ে ভাল হচ্ছে আলেমদের পরামর্শ নেয়া। আর নিজের মাথাকে একটু খাটালে এমনিতেই অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। তাই ইনহেলার নিবেন কী নিবেন না তা আগে নিজেকে ভাল করে জিজ্ঞেস করুন। ব্যাস, সমাধান পাওয়া গেল। ইনহেলার নিলে রোজা ভাঙবে না।
0 মন্তব্যসমূহ
please don't enter any spam links in the Comment Box.